আমার সাধ না মিটিল, আশা না পুরিল ...
শিরোনাম: "আমার সাধ না মিটিল, আশা না পুরিল ...
রবিন ছোটবেলা থেকেই বড় স্বপ্ন দেখত। ছোট গ্রামে বেড়ে ওঠা রবিনের জীবনে বই আর গল্প ছিল সবকিছু। সে কল্পনার মণিতে হারিয়ে থাকত, রাতের আকাশের নীলিমায় সে ভবিষ্যতের ছবি আঁকত, যেখানে সে একজন বিখ্যাত লেখক হিসেবে চিরকাল স্মরণীয় হবে। তার মনের প্রতিটি কোণে ছড়িয়ে ছিল সাহসী স্বপ্ন, কিন্তু জীবনের তীরছিদ্র বাস্তবতা একদিন তার এই আশা কাঁপিয়ে দিল।
প্রথমে, রবিন যখন স্কুলে লেখালেখিতে মনোযোগী ছিল, তখন শিক্ষকরা তার প্রতিভার প্রশংসা করত। সে লিখত অজানা দেশ, দুর্লভ প্রেম, আর বেদনার অনন্য কাহিনী। কিন্তু যখন বড়দের চোখে তাঁর লেখার মূল্য যাচাই শুরু হলো, তখন প্রতিটি পদক্ষেপে বাধার মুখোমুখি হতে হলো। কলেজে ঢোকার পর, জীবনের বাস্তবতা তার স্বপ্নকে নরমালি ধ্বংস করে ফেলার চেষ্টা করলো। প্রতিটি প্রতিযোগিতায়, প্রতিটি প্রকাশনার জন্য জমা দেওয়া প্রবন্ধে, রবিন নিজেকে এমন এক দিশাহীন অনুভব করত যেন—"আমার সাধ না মিটিল, আশা না পুরিল"।
একদিন, যখন রবিন এক লালিতাভ দুপুরে আরেকটি প্রতিকূলতা মোকাবেলা করছিল, সে নিজের একমাত্র সঙ্গী—তার নোটবই—তে সেই বাক্যটি চিরকাল স্মরণীয়ভাবে লিখে রাখল। তখনই তার সামনে হাজির হলেন একজন বৃদ্ধ, নাম দেবাশীষ। দেবাশীষের চোখে ছিল জীবনের গভীরতা আর ক্ষতিগ্রস্ত অভিজ্ঞতার ছাপ। তিনি রবিনের নোটবই পড়ে বললেন, “প্রতিটি লেখক, প্রতিটি শিল্পী একবারই এই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যায়। যখন তুমি ভাববে, ‘আমার সাধ না মিটিল, আশা না পুরিল’, তখন বুঝতে পারো, তুমি সত্যিকারের পথে আছো।”
দেবাশীষ তার জীবনের কাহিনী শেয়ার করলেন—কীভাবে বহুবার ব্যর্থতার মধ্য দিয়ে তিনি নিজেকে খুঁজে পেয়েছিলেন, কীভাবে প্রতিটি ব্যর্থতা তাকে নতুন দিশা দেখিয়েছিল। রবিন ধীরে ধীরে বুঝতে লাগল, সফলতার মানে শুধুই ফলাফল নয়; বরং হলো সেই অনন্ত সংগ্রাম, সেই অন্তহীন প্রচেষ্টা যেখানে আমরা আমাদের সত্তাকে খুঁজে পাই।
সেই দিন থেকেই রবিন তার লেখালেখির উদ্দেশ্য নতুন করে নির্ধারণ করল। আর সে বুঝতে পারল, হয়তো তার স্বপ্ন বড়, হয়তো সমাজের চোখে সফলতা আলাদা—but তার নিজের জন্য লিখতে থাকা, অনুভূতির প্রতিচ্ছবি শব্দে রূপান্তর করা, তা ছিল তার সত্যিকারের সাফল্য। প্রতিটি ব্যর্থতা, প্রতিটি অগ্রসর হতে না পারার কষ্ট, তাকে আরও গভীরতা ও মানবিকতা প্রদান করলো।
অবশেষে, রবিন প্রকাশনা থেকে সাফল্য পেল না, কিন্তু তার লেখার প্রতি ভালোবাসা, সংগ্রামের গল্প ও অভিজ্ঞতা হয়ে উঠল অসংখ্য পাঠকের প্রেরণা। সে বুঝেছিল, জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপ—হোক তা সাফল্য বা ব্যর্থতা—আমাদের গঠন করে। আর সেই সন্ধানই হলো জীবনের প্রকৃত অর্থ।
এভাবেই রবিন তার যাত্রা অব্যাহত রাখল, প্রতিটি নতুন দিনের সাথে নিজেকে আরো ভালোভাবে গড়ে তোলার প্রত্যয় নিয়ে। "আমার সাধ না মিটিল, আশা না পুরিল" বাক্যটি হয়তো এখনো তার নোটবইয়ের এক পাতা, কিন্তু তা তার মনে করিয়ে দেয়—প্রত্যেকটি ব্যর্থতা একটি শিক্ষা, প্রতিটি হতাশা নতুন আশার সূচনা।
শেষ কথা:
সফলতার পথে হাঁটতে হাঁটতে অনেক সময় ব্যর্থতা ও হতাশার মুখোমুখি হতে হয়, কিন্তু প্রতিটি ব্যর্থতা আমাদের শেখায় যে, প্রকৃত সফলতা মানে শুধু লক্ষ্য অর্জন নয়, বরং সেই যাত্রার প্রতিটি মুহূর্তকে গ্রহণ করা ও এতে থাকা অভিজ্ঞতাকে সজীব করে তোলা।
No comments:
Post a Comment